রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসেনি দালানে হামলায় নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেন সানজুর বাড়িতে এখনো স্তব্ধ তার পরিবার। শিয়াদের মিছিলে হামলা হলেও নিহত সাজ্জাদের পরিবার কিন্তু সুন্নি।
সপ্তম শ্রেনীতে পড়ত ১৫ বছর বয়সী সানজু। তার সহপাঠী, শিক্ষক ও পাড়া প্রতিবেশীরা রবিবারও সমবেদনা জানাতে বাড়িতে এসে ভিড় করেছেন।
তার পরিবার বলছে, হোসেনি দালানের ভেতরে এমন ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এর পেছনে জড়িতদের বিচার না হলে তা হবে সরকারের ব্যর্থতা।
কর্তৃপক্ষ তাদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ করছে নিহত সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার, যারা বসবাস করেন ঢাকার কাছেই কেরানিগঞ্জে।
কেরানিগঞ্জের শুভাঢ্যা এলাকায় যে বাড়িতে সানজুর পরিবারের বাস সেখানে গিয়ে দেখা গেলো মেঝের উপর গোল হয়ে বসে আছেন সবাই।
কোনও কথা নেই কারো মুখে। মা রাশেদা বলছিলেন পাচ ভাই দুবোনের মধ্যে সব চাইতে ছোট সানজু ক্রিকেট খেলা নিয়ে খুব আগ্রহী ছিল।
স্থানীয় চরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র ছিলো সানজু। কদিন ধরে স্কুলের ছুটি চলছিল। মা রাশেদা জানালেন কয়েকদিন ধরেই তাই সে তাজিয়ার মিছিলে যাবার ব্যাপারে খুব ইচ্ছা প্রকাশ করছিল।
বোমা হামলার ঘটনায় এই পরিবারের আরো তিন জন আহত হয়েছেন। সানজুর ভাবি সুমি বেগম তাদের একজন।
তিনি বলছিলেন, ঘটনার পর সানজুকে নিয়ে যখন হাসপাতালে ছুটছিলেন, তখন কারো সাহায্য পাননি তারা।
মাত্র কদিন আগেই তোলা সানজুর একটি ফটোগ্রাফ হাতে নিয়ে ঘরের এক কোনায় বসে ছিলেন বাবা মোহাম্মদ নাসির। সেটি সবাইকে দেখাচ্ছিলেন তিনি।
মি নাসের বলছিলেন, তারা সুন্নি মুসলিম হলেও শিয়া সম্প্রদায়ের এই আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিতেন।
হোসেনি দালানের ভেতরে ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনে এমন ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য এক দুর্ভাগ্য বলে অভিহিত করলেন মোহাম্মদ নাসির।
তিনি আরো বলছেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরে বিচারের আওতায় না আনা গেলে তা হবে সরকারের ব্যার্থতা।
ঘটনার পর থেকেই বারবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডাক পড়ছে এই পরিবারের সদস্যদের।
মি নাসির বলছেন, কর্তৃপক্ষের কেউ এখনও আসেননি তার বাড়িতে, বরং তাদেরকেই বারবার ডাকা হচ্ছে। অনেক রাত অবধি থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।
এই বিষয়টিকে শোক সন্তপ্ত একটি পরিবারের জন্য চরম এক হয়রানি বলেও মনে করছেন তিনি।
তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখন কিছুই চান না সাজ্জাদ হোসেন সানজুর পরিবার। শুধু ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত সনাক্ত করে বিচারের দাবি করছেন তারা। বিবিসি